হাদীসগ্রন্থ গুলোতে নামাজের ব্যাপারে যথেষ্ট তাকীদ ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। তাদের সবগুলোকে একসাথে বর্ণনা করা দুরুহ ব্যাপার। তবুও চল্লিশটি হাদিসের অনুবাদ সংক্ষেপে নিচে দেয়া হল।
(১) রাসুলে পাক (সা:) বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার উম্মতের উপর সর্বপ্রথম নামাজ ফরজ করেছেন এবং কেয়ামতের দিন সবার আগে নামাজের হিসাব নয়া হবে।
(২) নামাজের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর, নামাজের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর।
(৩) মানুষের মধ্যে এবং শিরকের মধ্যে নামাজই একমাত্র প্রতিবন্ধক।
৪) ইসলামের নিদর্শন একমাত্র নামাজ। যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে ওয়াক্ত ও সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে নামাজ পরে সে মোমিন।
(৫) আল্লাহপাক ঈমান ও নামাজের চেয়ে উত্তম শ্রেষ্ঠত্বের আর কোন বিষয়কে ফরজ করেননি। যদি করতেন তাহলে ফেরেশতারা দিনরাত কেউ রুকু আর কেউ সেজদায় পরে থাকতেন।
(৬) নামাজ দ্বীন ইসলামের খুটি।
(৭) নামাজের দ্বারা শয়তানের মুখ কাল হয়ে যায়।
(৮) নামাজ মোমেনের নূর স্বরূপ।
(৯) নামাজ শ্রেষ্ঠ জেহাদ।
১০) কোন ব্যক্তি যখন নামাজে দাড়ায় তখন আল্লাহপাক তার দিকে পূর্ণ মনোযোগ দেন।আর যখন সে নামাজ থেকে সরে যায়, তখন আল্লাহও মনোযোগ সরিয়ে নেন।
(১১) যখন কোন আসমানী বিপদ অবতীর্ণ হয় তখন মসজিদ আবাদকারীদের উপর থেকে বিপদ সরে যায়।
(১২) কোন পাপের কারণে কোন নামাজি দোজখে প্রবেশ করলে তার সেজদার অঙ্গ দোজখের আগুন স্পর্শ করবেনা।
(১৩) সেজদায় ব্যবহৃত অঙ্গকে আল্লাহপাক দোজখের আগুনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
(১৪) ঠিক ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়।
(১৫) মানুষ যখন সেজদারত অবস্থায় কপাল মাটিতে মিশায় সেই অবস্থায় মানুষকে দেখতে আল্লাহ অধিক ভালবাসেন।
(১৬) সেজদায় রত অবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য সবচাইতে বেশি লাভ হয়।
(১৭) নামাজ বেহেশতের কুঞ্জি।
(১৮) মানুষ নামাজে দাড়ালে তার জন্য বেহেশতের দরজা খুলে যায় এবং আল্লাহতায়ালা ও নামাজিদের মধ্যে কোন পর্দা থাকে না।
(১৯) নামাজি আল্লাহর দরজায় করাঘাত করে, যে ক্রমাগত করাঘাত করে তার জন্য দরজা খোলাটাই স্বাভাবিক।
(২০)শরীরে জন্য যেমন মাথা, দ্বীনের জন্য তেমন নামাজ।
(২১) নামাজ হৃদয়ের আলো, যার ইচ্ছা সে যেন নামাজ দ্বারা হৃদয়কে আলোকিত করে।
(২২) ঠিকভাবে অজু করে নম্রতার সাথে যে দুই রাকাত ফরজ বা নফল নামাজ আদায় করে গোনাহের জন্যই ক্ষমা চায় আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা করে দেন।
(২৩) জমিনের যে অংশে নামাজ পড়া হয়, সে অংশ অন্য অংশের উপর গর্ব করে থাকে।
(২৪) দুই রাকাত নামাজ পরে দোয়া করলে তা নিশ্চয়ই কবুল হয়। তবে সাথে সাথে কবুল হতে পারে বা নামাজির মঙ্গলের জন্য কিছু দেরিও হতে পারে।
(২৫) যে নির্জনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে যা আল্লাহ ও ফেরেশতা ছাড়া আর কেউ জানেনা সে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরোয়ানা পেল।
(২৬) যে একটি ফরজ আদায় করল আল্লাহর দরবারে তার একটি দোয়া কবুল হল।
(২৭) যে পাচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বের সাথে রুকু সেজদা অজু ইত্যাদি সঠিকভাবে আদায় করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব, দোজখ হারাম।
(২৮) মুসলমান যখন এহতেমামের সাথে পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে থাকে, শয়তান তাকে ভয় করে আর সে যখন নামাজে গাফিলতি করে তখন শয়তানের সাহস বেড়ে যায় এবং তাকে কুপথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়।
(২৯) ওয়াক্ত মত নামাজ পড়া সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।
(৩০)নামাজ প্রত্যেক পরহেজগার ব্যক্তির কোরবানী স্বরূপ।
(৩১) আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়া।
(৩২) ভোরে যে নামাজ পড়তে যায় তার হাতে ঈমানের পতাকা থাকে।
(৩৩) জোহরের আগে চার রাকাত নামাজ তাহাজ্জুদের চার রাকাতের সমতুল্য।
(৩৪) জোহরের আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ তাহাজ্জুদের চার রাকাতের সমতুল্য। (৩৫) মানুষ যখন নামাজে দাড়ায় তখন আল্লাহর রহমত তার দিকে রুজু হয়।
(৩৬) মধ্য রাতের নামাজ শ্রেষ্ঠতর নামাজ, কিন্তু কমসংখ্যক লোকই তা আদায় করে থাকে।
(৩৭) আমার কাছে হজরত জিবরাইল (আ:) এসে বললেন, হে মোহাম্মদ (সা:)! যতদিন আপনি বেচে থাকুন না কেন, একদিন আপনাকে মৃত্যু বরণ করতেই হবে, আর যাকেই ইচ্ছা ভালবাসুন না কেন, একদিন তার কাছ থেকে পৃথক হতেই হবে আর ভাল খারাপ যে আমলই করুন না কেন তার প্রতিদান অবশ্যই পাবেন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মোমেনের শারাফত ও বুজুর্গী তাহাজ্জুদের মধ্যে।
(৩৮) রাতের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়ার সবকিছু থেকে উত্তম। তা আদায় করা কষ্টকর না হলে আমি তা উম্মতের উপর ফরজ করে দিতাম।
(৩৯) তাহাজ্জুদের নামাজ অবশ্যই পড়বে। কারণ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া নেক বান্দাদের তরীকা আর আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার কারণ। তাহাজ্জুদ গোনাহ থেকে বিরত রাখে। তা কৃত অন্যায় থেকে ক্ষমা পাওয়ার উপায়। এ দ্বারা দেহের সুস্থতাও লাভ করা যায়।
(৪০) আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি দিনের শুরুতে চার রাকাত নামাজ আদায় করতে শৈথিল্য করিওনা। আমি সারাদিন তোমার সব কাজ সম্পাদনের ব্যবস্থা করব।
হাদিসগ্রন্থগুলোতে নামাজের ফজিলত ও নামাজের প্রতি উৎসাহ দেয়ার জন্য অসংখ্য হাদিস বর্ণিত আছে। রেওয়ায়েত অনুযায়ী চল্লিশটি হাদিসের এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, তাই এখানে চল্লিশটি হাদিস উদ্ধৃত করা হয়েছে। কেউ এই হাদীসগুলোকে মুখস্ত করে নিলে চল্লিশটি হাদিস রক্ষার ফজিলত লাভ করবে। আসলে নামাজ এমনই এক সম্পদ যার মর্যাদা ঐ ব্যক্তি রক্ষা করতে পারে যাকে আল্লাহপাক নামাজের স্বাদ গ্রহণ করিয়েছেন। এজন্য হুজুরে পাক (সা:) নামাজকে চোখের তৃপ্তি বলে উল্লেখ করেছেন। আর এ কারণেই হুজুর (সা:) রাতের বেশিরভাগ সময়ই নামাজের মধ্যে কাটিয়ে দিতেন। এজন্যই হুজুর (সা:) জীবনের শেষ মুহূর্তেও নামাজের তাকিদ করেছেন। আরো অনেক হাদিসে হুজুর পাক (সা:) বলেছেন, নামাজের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করিও। হুজুর (সা:) অন্য আরেক হাদিসে বলেছেন,অন্য সব আমলের মধ্যে নামাজই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এক সাহাবী বলেন, আমি একদিন রাতে মসজিদে নববীতে ছিলাম। হুজুর (সা:) নামাজ পড়ছেন দেখে উনার পেছনে আমার নামাজ পড়ার আগ্রহ হল। তাই নিয়ত বাধলাম, হুজুর (সা:) ছুরা বাক্বারা শুরু করলেন। আমি ভাবলাম তিনি একশ আয়াত পড়ে রুকু করবেন, কিন্তু তা করলেন না। এবার ভাবলাম দুইশ আয়াত পড়ে রুকুতে যাবেন, কিন্তু তাও করলেন না। আমি আবার ভাবলাম হয়ত সূরা বাক্বারা শেষ করে রুকুতে যাবেন। সূরা বাক্বারা যখন শেষ হল হুজুর (সা:) তখন কয়েকবার আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু পাঠ করলেন।তারপর সুরা আল ইমরান শুরু করলেন, আমি চিন্তায় পরে গেলাম। এবং ভাবলাম এই সুরা পড়ে নিশ্চয়ই রুকু করবেন, কিন্তু সুরা আল ইমরান শেষ করে হুজুর (সা:) তিনবার আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু পাঠ করে সুরা মায়েদা শুরু করলেন এবং এই সুরা শেষ করে রুকুতে গেলেন। রুকুতে তাসবিহের সাথে আরো কি পড়লেন যা আমি বুঝতে পারলাম না। তারপর সেজদায় গিয়ে তসবিহ পড়লেন এবং সাথে আরো কিছু পড়লেন যা আমি বুঝতে পারলাম না। অত:পর দ্বিতীয় রাকাতে তিনি সুরা আনআম শুরু করলেন। আমি হুজুরের সাথে নামাজ পড়ার সাহস পেলাম না। বাধ্য হয়ে নামাজ ছেড়ে চলে গেলাম।হুজুর (সা:) প্রথম রাকাতে প্রায় পাচ পারা তেলাওয়াত করেন। তারউপর হুজুর (সা:) এর পড়াও একবারে ধীরে ধীরে তাজবিদ ও তারতীলের সাথে একেকটি আয়াত পৃথকভাবে পড়ছিলেন। ফলে প্রতিটি রাকাত কতই না লম্বা হয়েছিল। এসব কারণেই নামাজ পড়তে পড়তে হুজুর (সা:) এর পা মোবারক ফুলে যেত। কিন্তু যে জিনিসের ভালবাসা একবার মনের ভিতর স্থান করে নেয় তার জন্য কোন কষ্টই আর থাকে না। বিখ্যাত মোহাদ্দেছ আবু ইসহাক সাহাবী (রা:) একশ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি আফছোছ করে বলতেন, হায় ! বার্ধক্যের কারণে নামাজের স্বাদ আর রইলনা। দুই রাকাতে সুরা বাক্বারা ও সুরা আল ইমরানের বেশি পড়া যায়না। (এই দুটি সুরাও পৌনে চার পারা)
No comments:
Post a Comment