অন্যায়
অপরাধ যেখানে অবাধে মাথাচাড়া দেয় মানবতা সেখানে ভুলুন্ঠিত। আর মানবতা হচ্ছে সেরকম একটি
ব্যবস্থা যেখানে মানুষ তার বাক্তি স্বার্থ এবং অন্য সবার স্বার্থ সমান করে দেখবে।যেখানে
প্রত্যেকে সমান নিরাপত্তা সমান অধিকার ভোগ করবে।অর্থ উপার্জনের জন্য সবাই অন্যের স্বার্থের
প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে।ইসলাম মানবতার জন্য সর্বোত্তম সমাধান।ইসলামের সঙ্গে সুদের মৌলিক
তফাত হচ্ছে, সূদ যে মুলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত তার সাথে আল্লাহর ইচ্ছা এবং মানুষের জীবনের
কোনো সম্পর্ক নেই। সুদের মুলনীতি এরকম- মানুষ তার অর্থ লাভের জন্য স্বাধীন।ভোগ ও ব্যবহারের
জন্য, যেকোনো উপায়ে বৃদ্ধির বাপারে সে স্বাধীন। এই স্বাধীনতার মধ্যে সে কারো আইন বা
শর্ত মেনে চলতে বাধ্য নয়, অন্য কাউকে সুযোগ দিতে বা কল্যান কামনার জন্য সে বাধ্য নয়।অর্থ
উপার্জনে তার কষ্ট হল কি হলনা এটি বিবেচ্য নয়।তাই তার জন্য মানব প্রকৃতির এই স্বাধীনতাকে
সামনে রেখেই সূদের আইন কানুন রচিত হয়েছে।কিন্তু মানব সত্তার ভিতরে অর্থ লিপ্সা, আত্বকেন্দ্রিকতা
বিদ্যমান কুপ্রবিত্তির তাড়নায় অপরকে কষ্ট দিয়ে তার হীন স্বার্থ চরিতার্থ করাটাই স্বাভাবিক।মানুষের
এই অর্থ লিপ্সা ও আত্বকেন্দ্রিকতা থেকেই গড়ে ওঠে এমন এক অর্থনীতি যা মানুষকে মানবতা
থেকে বহু দূরে নিয়ে যায় সমাজ বাবস্থা তখন ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠি, দেশের স্বার্থ বিসর্জন
দিয়ে কতিপয় পুজিপাতির স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত হয়।ফলে সম্পদের সঞ্চালন, বৃদ্ধি বন্ধ
হয়ে কিছু পুজিপাতির হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়ে দরিদ্র পরিনত হয় আরও দরিদ্রে। বর্তমান বিশ্বে
অভাবগ্রস্থ, গরিব, দুঃখির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে এর কারন হল আগে সূদী-মহাজনরা
বাড়ি বাড়ি সূদী কারবার চালাতো এখন তারা পুরো বিশ্বে সংস্থা আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।রেডিও,
টেলিভিশন, সংবাদপত্র, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জনসাধারনকে প্রলুব্ধ করছে
অতঃপর তার হাড় মাংস চিবিয়ে খাচ্ছে।খুবই আশ্চর্য হই যখন এই সুদকেই দারিদ্র বিমচনের উপায়
হিসাবে প্রচার করা হয়, দারিদ্র বিমোচনের নোবেল দেওয়া হয় সূদী-মহাজনদের হাতে।আজ আমাদের
সামনে সেই দিনই হাযির হয়েছে যেই দিনের কথা নবী (সাঃ) বলেছেন,
“মানুষের উপর এমন যুগ অবশ্যই আসবে যখন মানুষ পরোয়া করবেনা কিভাবে
সে মাল অর্জন করল হালাল থেকে না হারাম থেকে” (সহিহ বুখারি হাদিস নং-১৯৫৩)
মনে
করুন একজনের কাছে কিছু টাকা আছে সে যদি নিজে কোনো ব্যবসা বা অন্য কাজে লাগায় তবে তাতে
লাভ লোকসানের সম্ভাবনা থাকে।কিন্তু সে যদি মুলধন এই সব সুদী সংস্থা হতে সংগ্রহ করে
তবে ওই সংস্থা নিজের লাভই বিবেচনা করে অর্থাৎ ব্যবসায়ে লাভ বা লোকসান যাই হোক ঋণ দাতার
অর্থ এবং সুদ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।শুভঙ্করের ফাকিটা এখানেই আর এই শুভঙ্করের ফাক
গলেই এই সুদী কারবারিরা অর্থকে কুক্ষিগত করছে।ঋণ গ্রহিতার সকল অর্থ স্থাবর, অস্থাবর
সম্পদ ঋন দাতার হাতে চলে যাচ্ছে।অমানবিকতাটাই মুলত এখানে তাইতো আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যারা সুদ খায় তারা ঐ ব্যক্তির ন্যায় উঠবে যাকে শয়তান স্পর্শ করে
পাগল করে দেয়। তা এ জন্য যে তারা বলে- ক্রয়-বিক্রয় সুদের মত অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে
হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন।”
(আল কোরআন - ২;২৭৫)
আল
কোরআন কেবল খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতেই বলেনা বরং খারাপ বর্জনএর উপায়ও বাতলে দেয়। তাইতো
এর পরেই আল্লাহ যাকাতের কথা বলেছেন,
“ আল্লাহ কোন পাপী কাফেরকে পছন্দ করেননা। নিশ্চই যারা ইমান আনে
এবং সৎ কর্ম করে, নামাজ কায়েম করে আর জাকাত দেয় তাদের নাই কোনো ভয় নাই কোনো চিন্তা।হে
লোকেরা তোমরা যারা ইমান এনেছ আল্লাহকে ভয় কর, বকেয়া সূদ ছেড়ে দাও যদি তোমরা মুমিন হও।”
(আল কোরআন - ২;২৭৭-২৭৮)
পরকালে সূদখোরের শাস্তিঃ
হাদীসঃ
মুসা ইবনে ঈসমাইল……… সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হইতে বর্নিত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, "আমি গত রাতে একটি স্বপ্ন দেখেছি, দুইজন লোক এসে আমাকে একটি পবিত্র ভুমিতে নিয়ে গেল। আমরা একটি রক্তের নদীর কিনারায় পৌছালাম সেখানে দেখলাম এক ব্যক্তি একটি রক্তের নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে এবং একটি লোক নদীটির কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে, কিনারায় দাড়ানো লোকটির সামনে কয়েকটি পাথর রয়েছে, মাঝের লোকটি কিনারায় উঠতে চাইলে কিনারার লোকটি মুখে পাথর মেরে তাকে আবার মাঝে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম লোকটি কে? সে বলল রক্তের নদীর মাঝে যে লোকটিকে আপনি দেখেছেন সে লোকটি সুদখোর ।"
(সহিহ বুখারী হাদিস নং ১৯৫৫)
সমাজ ব্যবস্থায় সুদের ভয়ঙ্কর পরিনতিঃ
১। ইসলামের
বুনিয়াদি চেতনার সাথে সুদ প্রতক্ষ্যভাবে সংঘর্ষশীল তাই যে অঞ্চলে সুদ বিদ্যমান সেই
জনপদে ইসলাম পুর্ন শক্তিতে বিরাজমান নেই বা থাকতে পারেনা।
২। সুস্থবুদ্ধি ও সকল সৌভাগ্যের
দ্বার রুদ্ধ করে ভারসাম্যপুর্ন উন্নয়নের পথকে কন্টকাকির্ন করে। এ অবস্থায় ইমান রক্ষা
করে বেচে থাক অসম্ভব।
৩। সুদী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির নৈতিকতার স্খলন ঘটে। নৈতিকতা ব্যতিত
ইসলামী জীবন ব্যবস্থার
কোনো একটি অংশও চলতে পারেনা। কারন নৈতিকতাই হল ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি।
আর ভিত্তি
কোনো কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হলে পুরো জীবন ব্যবস্থাটাই ধসে পড়বে।