menu 2

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Monday, February 10, 2014

রহস্যের চাদরে মোড়া বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এবং বাস্তবতা 2


অপার রহস্যে ঘেরা আমাদের পৃথিবীএই সকল রহস্য সমুহ নিয়েই আমাদের বসবাসদিন যাচ্ছে বিজ্ঞান উন্নত হচ্ছে আর দূর্ভেদ্য রহস্য সমুহ আমাদের কাছে বাস্তবতা হয়ে ধরা দিচ্ছেএমনই এক রহস্যের নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বা শয়তানের সাগর যা হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পুর্ব দিকের একটি সাগর সীমার নামএ পর্যন্ত এখানে যত রহস্যময় ও কারণহীন দুর্ঘটনা ঘটেছিল, অন্য কোথাও এত বেশি দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করা হয়কথিত আছে যে, এসবের পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রকৃতিক কোন শক্তি বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর উপস্থিতি এলেন অস্টিনজাহাজটির কথাই ধরা যাকমধ্য আটলান্টিকে পাড়ি দেওয়ার সময় জাহাজের নাবিকরা লক্ষ করলেন একটু দূরে একটি খালি জাহাজ ভাসছেনিজের জাহাজের মাঝি-মাল্লাদের পাঠালেন একটু দেখে আসার জন্যমাঝিরা জাহাজের কাছাকাছি পেঁৗছতেই ঘনকুয়াশা চারদিক ঢেকে গেলকিছুই দেখা যাচ্ছে না  কি হলো? কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে কুয়াশা কেটে গেলখালি জাহাজটি দেখা গেলকিন্তু মাঝি-মাল্লারা গেল কোথায়? তারা তো ফিরছে না!ঘটনার রহস্য সমাধান করতে আরও একটি দলকে পাঠানো হলোওই দলটিও জাহাজে পেঁৗছামাত্র শুরু হলো প্রচণ্ড ঝড়এবারও কিছুই দেখা গেল নাঝড় থামার পর দেখা গেল সব শেষ মাঝি-মাল্লাদের আর দেখা গেল নাএমনকি জাহাজটিও কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে!
তবে অনেকে মনে করেন ঐ সকল অন্তর্ধানের কারণ নিছক দূর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে যে , যেসব দূর্ঘটনার উপর ভিত্তি করে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার বেশ কিছু ভুল, কিছু লেখক দ্বারা অতিরঞ্জিত হয়েছে এমনকি কিছু দূর্ঘটনার সাথে অন্যান্য অঞ্চলের দূর্ঘটনার কোনই পার্থক্য নেই   

অবস্থান

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল যে তিনটি প্রান্ত দ্বারা সীমাবদ্ধ তার এক প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, আরেক প্রান্তে পুয়ের্তো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপ অবস্থিত
ত্রিভুজাকার এ অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৪ লাখ বর্গ মাইলএটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিতঅবশ্য এই বিন্দু নির্ধারণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে এই ত্রিভূজের উপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছেএই তীব্র গতির স্রোতই মূলত অধিকাংশ অন্তর্ধানের কারণএখানকার আবহাওয়া এমন যে হঠাৎ করে ঝড় ওঠে আবার থেমে যায়, গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানেবিংশ শতাব্দীতে টেলিযোগাযোগ, রাডার ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি পৌঁছানোর আগে এমন অঞ্চলে জাহাজডুবি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনাএই অঞ্চল বিশ্বের ভারী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলকারী পথগুলোর অন্যতমজাহাজগুলো আমেরিকা, ইউরোপ  ক্যারিবিয়ান দ্বীপপূঞ্জে যাতায়াত করেএছাড়া এটি হল প্রচুর প্রমোদতরীর বিচরণ ক্ষেত্রএ অঞ্চলের আকাশপথে বিভিন্ন রুটে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল করেত্রিভূজের বিস্তৃতির বর্ননায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেনকেউ মনে করেন এর আকার ট্রাপিজয়েডের মত, যা ছড়িয়ে আছে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপূঞ্জ এবং ইশোর (Azores) পূর্বদিকের আটলান্টিক অঞ্চল জুড়ে, আবার কেউ কেউ এগুলোর সাথে মেক্সিকোর উপসাগরকেও যুক্ত করেনতবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছেফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, সান হোয়ান (San Juan), পর্তু রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপূঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা যেখান ঘটেছে অধিকাংশ দূর্ঘটনা 

কলম্বাসের লেখায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলঃ

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বিষয়ে যারা লিখেছেন তাঁদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম এই ত্রিভূজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেনতিনি লিখেছিলেন যে তাঁর জাহাজের নবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেনএছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন
কলম্বাসের লেখায়কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার ব্যখ্যাঃ
কম্পাসের পাঠ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকাংশে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাহিনীর সাথে জড়িতএটা মনে রাখা প্রয়োজন যে কম্পাস থেকে চুম্বক মেরুর দূরত্বের উপর ভিত্তি করে এর দিক নির্দেশনায় বিচ্যূতি আসেউদাহরন হিসেবে বলা যায়- যুক্তরাষ্ট্রে শুধুমাত্র উইসকনসিন(Wisconsin) থেকে মেক্সিকোর উপসাগর(Gulf of Mexico) পর্যন্ত সরলরেখা বরাবর চৌম্বক উত্তর মেরু সঠিক ভাবে ভৌগোলিক উত্তর মেরু নির্দেশ করেএই সাধারণ তথ্য যে কোন দক্ষ পথপ্রদর্শকের জানা থাকার কথাকিন্তু সমস্যা হল সাধারণ মানুষকে নিয়ে, যারা এ বিষয়ে কিছুই জানে নাঐ ত্রিভূজ এলাকা জুড়ে কম্পাসের এমন বিচ্যূতি তাদের কাছে রহস্যময় মনে হয়কিন্তু এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা

ট্রায়াঙ্গলের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিখ্যাত কিছু  দূর্ঘটনাঃ

১)  ১৯৪৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ওই ত্রিভুজ স্থানে যানগুলো রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়ঘটনাটিকে বলা হয় মেরি সিলেক্ট অব দি স্কাইমেরি সিলেক্ট জাহাজটির অন্তর্ধান কাহিনীও অদ্ভুতসেটি অবশ্য বারমুডার সীমানার মধ্যে ঘটেনি, তবু এটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছেআকাশে বিমান মহড়া চলছেএরকম প্রতিদিনই হয়প্রতিটি বিমানেই পাইলটকে নিয়ে তিনজন ক্রু থাকেসেদিন ছিল একজন কমতারিখ ৫ ডিসেম্বরফলে আবহাওয়া পরিষ্কারকন্ট্রোল টাওয়ার বিশেষ জরুরিভীত একটি কণ্ঠস্বরমনে হচ্ছে আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছিআমরা মাটি দেখতে পাচ্ছি নাটাওয়ার জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের পজিশন জানাওতাও আমরা ঠিক বুঝতে পারছি নামনে হচ্ছে আমরা হারিয়ে গেছিবিকাল গড়িয়ে গেলতখনো তারা যেই তিমিরে সেই তিমিরেই১৩ জন ক্রু নিয়ে একটি বিরাট মার্টিন মেরিনার ফ্লাইং বোট পাঠানো হলো তাদের উদ্ধার করে আনার জন্যএ ফ্লাইং বোটটি অশান্ত সমুদ্রেও নামতে পারে এবং এমনভাবে তৈরি যে, পানিতে ডুবে নাফ্লাইট নাইনটির উদ্দেশ্যে কন্ট্রোল টাওয়ার বার্তা প্রেরণ করল-যেখানে আছ সেখানেই থাকসাহায্য পাঠানো হলোকিন্তু আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল নামেরিনার আকাশে উঠে কোনো বিমান দেখতে পেল নাএটুকু খবর পাওয়ার পরই ব্যসমেরিনারের সঙ্গেও আর যোগাযোগ করা গেল নাদমকা হাওয়াকোথায় যে গেল, কী যে হলো কিছুই বোঝা গেল নাব্যাপক খোঁজাখুঁজি করে, তল্লাশি চালিয়ে, হইহই ফেলে দিয়েও বিমানের একটি টুকরারও কোনো সন্ধান পাওয়া গেল নানেভার বোর্ড অব ইনকুয়ারির বৈঠক বসলতদন্ত হলোতদন্তের জন্য যারা বিমান নিয়ে গেল তারা কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যে পথভ্রষ্ট হলো না
২) ১৯৪৯ সালের ১৭ জানুয়ারী স্টার এরিয়েল নামের একটি বিমান লন্ডন থেকে জ্যামাইকা যাচ্ছিলসকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে এটি বারমুডার আকাশে উড়লতখন আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিক ও সুন্দরআর সমুদ্র ছিল শান্তওড়ার ৫৫ মিনিট পর বিমানটি অদৃশ্য হয়ে গেল

এ নিয়ে অনেক অনুসন্ধান হলোকিন্তু সমুদ্রের কোথাও বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেল নাবিমানটি অদৃশ্য হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি রাতে১৮ তারিখ রাতে এক অনুসন্ধানী দল জানাল, সেখানকার সমুদ্রের বিশেষ বিশেষ একটি জায়গা থেকে অদ্ভূত একটি আলোর আভাস দেখা যাচ্ছেএ ঘটনার এক বছর আগে সেখান থেকে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল একটি ডিসি-৩ বিমানসেটি যাচ্ছিল সানজুয়ান থেকে সিয়ামিক্যাপ্টেনের নাম রবার্ট লিংকুইসডভোর ৪টা ১৩ মিনিটে বিমানটি থেকে শেষ বেতার বার্তা ভেসে এলো, আমরা অবতরণ ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে চলেছিদক্ষিণে আর মাত্র পঞ্চাশ মাইল দূরে সিয়ামি বিমানবন্দরআমরা সিয়ামি শহরের আলোকমালা দেখতে পাচ্ছিসব ঠিক আছেকোনো গোলমাল নেইঅবতরণের নির্দেশের অপেক্ষায় রইলামএই শেষ বার্তা পাঠিয়ে বিমানটি অদৃশ্য হয়ে যায়এরপর এর আর কোনো হদিস মেলেনি

৩)  ১৯৪১ সালে ওই রহস্যময় জায়গাতে অদৃশ্য হয়ে গেল তিনিটি ট্যাঙ্কার, একটি চার ইঞ্জিনের উড়োজাহাজ আর একটি ট্রলার
৪) আরেকটি বিমান যাচ্ছিল নাসাউ থেকে বাহামার গ্রান্ডটার্ক দ্বীপের দিকেওই দ্বীপের কাছাকাছি এসে পাইলট বেতার সংকেতে জানালেন, ‘আমি কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি নাদুটি অজানা দ্বীপের চারপাশে চক্কর মারছিঅথচ নিচে কিছুই দেখেতে পাচ্ছি নাএই ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় আছে কি? যারা এই দুর্ঘটনার সাক্ষী তারা দেখতে পেল ওই হালকা বিমানটি প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে দ্বীপের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে মেঘমুক্ত আকাশে হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে গেলএই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের একটি রহস্যময় অঞ্চল হলো জলীয়কেন্দ্রের একটি বিন্দুফ্লোরিয়া থেকে বাহামার মধ্যে একট অঞ্চলকে বলা হয় রেডিও ডেড স্পটআশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সেখানে কোনো বেতারতরঙ্গ প্রবেশ করতে পারে না এবং বের হতেও পারে নাএমন একটি বিন্দু আছে যেখানে কম্পাস অচল হয়ে যায়
৫) ১৯১৮ সালে সেখানে ইউএস নেভির কয়েকটি জাহাজ নিখোঁজ হয়েছিলএর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে সাইক্লোপস জাহাজের অদৃশ্য হওয়াতাতে ছিল ৩০৯ জন যাত্রী১৯ হাজার টন ভারী জাহাজটি বারবাডোস থেকে বাল্টিমোরের দিকে যাত্রা করেছিলএ জাহাজটি সেখানে অদৃশ্য হয়ে যায়
৬) বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের আরেকটি বিখ্যাত ঘটনা হলো ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে অন্তর্ধান হওয়া ফ্লাইট নাইনটিনআর এটি নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যাগাজিনে লেখা হয়, ‘বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলনেতাকে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে, আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ রঙের পানি, কোথাও সাদা কিছু নেইএতেই প্রথম ফ্লাইট নাইনটিনকে কোনো অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে কি আসলেই অতিপ্রাকৃত কোনোকিছুর অস্তিত্ব আছে?

কুসচ (Kusche) এর ব্যাখ্যা:

লরেন্স ডেভিড কুসচ হলেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি”-র রিসার্চ লাইব্রেরিয়ান এবং দ্যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল মিস্ট্রি: সলভড (১৯৭৫)এর লেখকতাঁর গবেষণায় তিনি চার্লস বার্লিটজ এর বর্ণনার সাথে প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের বর্ণনার অসংগতি তুলে ধরেনযেমন- যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমান থাকার পরেও বার্লিটজ বিখ্যাত ইয়টসম্যান ডোনাল্ড ক্রোহার্সট(Donald Crowhurt) এর অন্তর্ধানকে বর্ণনা করেছেন রহস্য হিসেবেআরও একটি উদাহরণ হল- আটলান্টিকের এক বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়ার তিন দিন পরে একটি আকরিকবাহী জাহাজের নিখোঁজ হবার কথা বার্লিটজ বর্ণনা করেছেন, আবার অন্য এক স্থানে একই জাহাজের কথা বর্ণনা করে বলেছেন সেটি নাকি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বন্দর থেকে ছাড়ার পর নিখোঁজ হয়েছিলএছাড়াও কুসচ দেখান যে বর্ণিত দূর্ঘটনার একটি বড় অংশই ঘটেছে কথিত ত্রিভূজের সীমানার বাইরেকুসচ এর গবেষণা ছিল খু্বই সাধারনতিনি শুধু লেখকদের বর্ণনায় বিভিন্ন দূর্ঘটনার তারিখ, সময় ইত্যাদি অনুযায়ী সে সময়ের খবরের কাগজ থেকে আবহাওয়ার খবর আর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সংগ্রহ করেছেন যা গল্পে লেখকরা বলেননিকুসচ এর গবেষণায় যা পাওয়া যায় তা হল-
·                    বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে যে পরিমাণ জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয় তার পরিমাণ বিশ্বের অন্যান সমুদ্রের তুলনায় বেশি নয়
·                    এ অঞ্চলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় (tropical storms) নিয়মিত আঘাত হানে, যা জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারনকিন্তু বার্লিটজ বা অন্য লেখকেরা এধরনের ঝড়ের কথা অনেকাংশেই এড়িয়ে গিয়েছেন
·                    অনেক ঘটনার বর্ণনাতেই লেখকেরা কল্পনার রং চড়িয়েছেনআবার কোন নৌকা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে বন্দরে ভিড়লে তাকে নিখোঁজ বলে‌ প্রচার করা হয়েছে
·                    আবার কখনোই ঘটেনি এমন অনেক ঘটনার কথা লেখকেরা বরেছেনযেমন- ১৯৩৭ সালে ফ্লোরিডার ডেটোনা সমুদ্রতীরে( Daytona Beach) একটি বিমান দূর্ঘটনার কথা বলা হয়, কিন্তু সেসময়ের খবরের কাগজ থেকে এ বিষয়ে কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি
সুতরাং কুসচ এর গবেষণার উপসংহারে বলা যায়- লেখকরা অজ্ঞতার কারনে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে বানোয়াট রহস্য তৈরি করেছেন

প্রকৃতিক ঘটনার মাধ্যমে ব্যাখ্যাঃ
মিথেন হাইড্রেটসঃ
কন্টিনেন্টাল সেলভে(continental shelve) জমে থাকা বিপুল পরিমাণ মিধেন হাইড্রেট অনেক জাহাজ ডোবার কারণ বলে দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ায় পরীক্ষাগারের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাতাসের বুদবুদ পানির ঘনত্ব কমিয়ে দেয়তাই সাগরে যখন পর্যায়ক্রমিক মিথেন উদগীরন হয়, তখন পানির প্লবতা(কোন কিছুকে ভাসিয়ে রাখার ক্ষমতা) কমে যদি এমন ঘটনা ঐ এলাকায় ঘটে থাকে তবে সতর্ক হবার আগেই কোন জাহাজ দ্রুত ডুবে যেতে পারে১৯৮১ সালে [ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে”] একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বর্ণিত আছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ উপকূলের বিপরীতে [ব্ল্যাক রিজ](Blake Ridge) এলাকায় মিধেন হাইড্রেট রয়েছে [২৩]আবার ইউএসজিএস(ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে) এর ওয়েব পেজ থেকে জানা যায়, গত ১৫০০ বছরের মধ্যে ঐ এলাকায় তেমন হাইড্রেট গ্যাসের উদগীরন ঘটেনি

হারিকেন

হারিকেন(Hurricane) হল শক্তিশালী ঝড়ঐতিহাসিক ভাবেই জানা যায়- আটলান্টিক মহাসাগরে বিষুব রেখারকাছাকাছি অঞ্চলে শক্তিশালী হারিকেনের কারনে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে, আর ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকাররেকর্ড অনুসারে ১৫০২ সালে স্প্যানিশ নৌবহর ফ্রান্সিসকো দ্য বোবাডিলা” (Francisco de Bobadilla) এমনি একটি বিধ্বংসী হারিকেনের কবলে পড়ে ডুবে যায়বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাহিনীর সাথে জড়িত অনেক ঘটনার জন্য এধরনের হারিকেনই দায়ী

গলফ স্ট্রিম

গলফ স্ট্রিম হল মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা(Straits of Florida) হয়ে উত্তর আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত উষ্ঞ সমুদ্রস্রোতএকে বলা যায় মহা সমুদ্রের মাঝে এক নদীনদীর স্রোতের মত গলফ স্ট্রিম ভাসমান বস্তু কে স্রোতের দিকে ভাসিয়ে নিতে পারেযেমনি ঘটেছিল ১৯৬৭ সালের ২২ ডিসেম্বর উইচক্রাফটনামের একটি প্রমোদতরীতেমিয়ামি তীর হতে এক মাইল দূরে এর ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে তার নাবিকরা তাদের অবস্থান কোস্ট গার্ডকে জানায়কিন্তু কোস্ট গার্ডরা তাদেরকে ঐ নির্দিষ্ট স্থানে পায়নি

দৈত্যাকার ঢেউঃ

হঠাৎ করেই সমুদ্রে দৈত্যাকার ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে, এমন কি শান্ত সমুদ্রেও এমন ঘটতে পারেতবে একথা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে এমন ঢেউ নিয়মিত সৃষ্টি হয়

মানব ঘটিত দূর্ঘটনা

অনেক জাহাজ এবং বিমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তদন্তে দেখা গিয়েছে এর অধিকাংশই চালকের ভুলের কারনে দূর্ঘটনায় পতিত হয়েছেমানুষের ভুল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, আর এমনি ভুলের কারনে দূর্ঘটনা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলেও ঘটেতে পারেযেমন কোস্ট গার্ড ১৯৭২ সালে ভি.এ. ফগ-এর নিখোঁজ হবার কারণ হিসেবে বেনজিন এর পরিত্যাক্ত অংশ অপসারনের জন্য দক্ষ শ্রমিকের অভাবকে দায়ী করেছেসম্ভবত ব্যবসায়ী হার্ভি কোনভার(Harvey Conover) এর ইয়ট টি তাঁর অসাবধানতার কারণেই নিখোঁজ হয়অনেক নিখোঁজের ঘটনারই উপসংহারে পৌঁছানো যায়নি, কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাদের কোন ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি

ইচ্ছাকৃত ভাবে যে সব ধ্বংসসাধিত হয়েছেঃ

যুদ্ধের সময় অনেক জাহাজ শত্রু পক্ষের অতর্কিত আক্রমণে ডুবে গিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হয়এ কারনেও জাহাজ নিখোঁজ হতে পারেতবেবিশ্বযুদ্ধের সময় বেশ কিছু জাহাজ, যাদের মনে করা হয় এমনি কারনে ডুবেছে, তাদের উপর অনুসন্ধান করা হয়তবে শত্রু পক্ষের নথিপত্র, নির্দেশনার লগ বই ইত্যাদি পরীক্ষা করে তেমন কিছু প্রমান করা যায়নিযেমন- মনে করা হয় ১৯১৮ সালে ইউ এস এস সাইক্লপস(USS Cyclops) এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধে এর সিস্টার শিপ প্রোটিয়াস(Proteu) এবং নিরিয়াস(Nereus) কে জার্মান ডুবোজাহাজ ডুবিয়ে দেয়কিন্তু পরবর্তীতে জার্মান রেকর্ড থেকে তার সত্যতা প্রমান করা যায়নি
আবার ধারণা করা হয় জলদস্যুদের আক্রমণে অনেক জাহাজ নিখোঁজ হয়ে থাকতে পারেসে সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাংশে এবং ভারত মহাসাগরে মালবাহী জাহাজ চুরি খুব সাধারণ ঘটনা ছিলমাদক চোরাচালানকারীরা সুবিধা মত জাহাজ, নৌকা, ইয়ট ইত্যাদি চুরি করত মাদক চোরাচালানের জন্য১৫৬০ থেকে ১৭৬০ পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ছিল জলদস্যুদের আখড়াকুখ্যাত জলদস্যু এডওয়ার্ড টিচ (Edward Teach Blackbeard) এবং জেন ল্যাফিট্টি(Jean Lafitte) ছিল ঐ অঞ্চলের বিভীষিকাতবে শোনা যায় জেন ল্যাফিট্টি(Jean Lafitte)-ই নাকি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের শিকার হয়েছিল

আর এক ধরনের দস্যুতার কথা শোনা যায়, যা পরিচলিত হত স্থল থেকেএধরনের দস্যুরা সমুদ্র ধারে রাতে আলো জ্বালিয়ে জাহাজের নাবিকদের বিভ্রান্ত করতনাবিকরা ঐ আলোকে বাতি ঘরের আলো মনে করে সেদিকে অগ্রসর হততখন জাহাজগুলি ডুবো পাহাড়ের সাথে সংঘর্ষে ডুবে যেতআর তারপরে ডোবা জাহাজের মালপত্র তীরের দিকে ভেসে এলে দস্যুরা তা সংগ্রহ করতহয়তো ডুবন্ত জাহাজে কোন নাবিক বেঁচে থাকলে দস্যুরা তাদেরকেও হত্যা করত

 

মেরিন বীমা কোম্পানী লয়েড'স অব লন্ডনের প্রতিক্রিয়া

মেরিন বীমা কোম্পানী লয়েড'স অব লন্ডন”(Lloyd's of London) দেখেছে যে , এই ত্রিভূজে অন্য সমুদ্রের চেয়ে উল্লেখ্য করবার মত ভয়ংকর কিছু নেইতাই তারা এই অঞ্চল দিয়ে গমনকারী কোন জাহাজের উপর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাশুল আদায় করে নাযুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড লেখকদের উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ১৯৭২ সালে ভি.এ. ফগ (V.A.FOGG) নামের একটি ট্যাঙ্কার মেক্সিকো উপসাগরে বিষ্ফোরণেরর পর ডুবে যায়কোস্ট গার্ডরা সে বিধ্বস্ত ট্যাঙ্কারের ছবি তোলেন এবং বেশ কিছু মৃত দেহও উদ্ধার করেনকিন্তু কতিপয় লেখক বলেছেন ঐ ট্যাঙ্কারের সব আরোহী অদৃশ্য হয়ে গেছে, শুধুমাত্র এর ক্যাপ্টেনকে তার কেবিনের টেবিলে হাতে কফির মগ ধরা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে [১২] টিভি সিরিয়াল NOVA / Horizon এর দ্যা কেস অব দ্যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (১৯৭৬-০৬-২৭)পর্বে বলা হয়েছিল , যে সব দূর্ঘটনার কথা বলা হয় সেগুলো ভিত্তিহীন।" সংশয়বাদী গবেষকগণ, যেমন আর্নেস্ট ট্যাভস ( Ernest Taves) এবং ব্যারি সিংগার( Barry Singer), দেখিয়েছেন যে , মিথ্যে রহস্য তৈরি করা বেশ লাভজনককারণ তখন ঐ মিথ্যে রহস্যের উপর ভিত্তি করে বই লিখে বা টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে প্রচুর অর্থ কামানো যায়
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল টি কিছু স্থলভাগের উপর দিয়েও গিয়েছে যেমন পোর্তো রিকো ( Puerto Rico), বাহামা এমন কি বারমুডা নিজেইকিন্তু এসব জায়গায় কোন স্থলযানের নিখোঁজ হবার খবর জানা যায়নিএছাড়া এই ত্রিভূজের মধ্যে অবস্থিত ফ্রীপোর্ট শহরে বড়সড় জাহাজ কারখানা রয়েছে আর রয়েছে একটি বিমান বন্দর, যা কোন গোলযোগ ছাড়াই বছরে ৫০,০০০ টি বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করছে

3 comments:

  1. Replies
    1. Thanks a lot sir for your comment. I am Shahriar serving as a 5th Engineer.

      Delete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete