একবিংশ
শতাব্দির তথা বিজ্ঞানের অগ্রগতির এই যুগে বসবাস করছি আমরা। প্রতিদিনের বিজ্ঞানের
নতুন নতুন আবিস্কারের সাথে প্রাসারিত হচ্ছে আমাদের দৃষ্টি, আজ পৃথিবীর পুর্ব থেকে
পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিন এমনকি মহাশুন্যেও আমরা অভিযান চালাচ্ছি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে তার সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা ও গবেষনা অর্থাৎ জ্ঞান বিজ্ঞান
চর্চার কথা বলেছেন, বার বার তাগিদ দিয়েছেন। প্রকৃত অর্থে বিজ্ঞান চর্চা একজন
মানুষকে আল্লাহর প্রতি পুর্ণ আনুগত্যশীল করে তোলে। কেননা স্রষ্টার স্রেষ্ঠতম সৃষ্টি
হচ্ছে মানুষ।
‘‘নিশ্চই আমি
আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি’’
(সূরা ইসরা ৭০)
আর
এই মর্যাদাসম্পন্ন মানুষের মাঝেই আল্লাহর একত্ববাদের অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে।
“বিশ্বাসকারীদের
জন্য পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে এবং তোমাদের নিজেদের
মধ্যেও রয়েছে তোমরা কি দেখনা?”
(সূরা যারিয়াত
২০,২১)
প্রথম আয়াতে
নিদর্শণাবলীর আলোচনায় আকাশ ও মহাশুন্যের কথা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র ভূ-পৃষ্ঠের কথা
উল্লেখ করা হয়েছে। এটা আমাদের নিকটবর্তী এং আবাসস্থল। দ্বিতীয় আয়াতে ভূ-পৃষ্ঠের
কথাও বাদ দিয়ে কেবল তার দেহের
প্রতি
দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে। সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দিকে দৃষ্টি গভীর ভাবে নিবদ্ধ করলে প্রত্যেকটি
অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আল্লাহর একত্ববাদের নিদর্শন সম্বলিত এক একটি কুদরাতি কিতাব হিসাবে
আমাদের সামনে হাজির হবে। সারা মহাবিশ্বের সকল কুদরাতি নিদর্শন সংকুচিত হয়ে আমাদের ক্ষূদ্র মানব শরীরে
বিদ্যমান। আমরা
আমাদের জন্মলগ্ন হতে মৃত্যু পর্যন্ত পর্যালোচনা করলে আমাদের মহিমান্বিত
সৃষ্টিকর্তা দৃষ্টিগোচর হয়।
কিভাবে বিশ্বময় ছড়ানো খাদ্য উপাদান এবং সুক্ষ উপাদান হতে একফোটা
বীর্য তৈরি হল? কিভাবে একফোটা বীর্য গর্ভাশয়ে স্থিতিশীল হল? অতঃপর কিভাবে
বীর্য গর্ভাশয়ে জমাট বাধা রক্তে পরিনত হল আবার জমাট বাধা রক্ত মাংসে রূপান্তরিত
হল? তারপর কিভাবে তাতে অস্থি তৈরী
করা হল? অতঃপর কিভাবে সেই প্রাণহীন পুতুলে প্রাণ সঞ্চার হল? কিভাবে সে এই ধরায় এল?
কিভাবে একটি অসহায় মানব শিশু একটি পুর্নাঙ্গ কর্মঠ মানুষে পরিনত হল?
কিভাবে কোটি কোটি মানুষের ভিতরে কিভাবে প্রত্যেক একজনের চেহারা অন্যজন হতে ভিন্ন ও
স্বতন্ত্র দৃষ্টি গোচর হয়? এই সামান্য কয়েক ইঞ্চির ভিতরে কার সাধ্য আছে স্বাতন্ত্র্য
রক্ষা করার? মানুষের মন-মেজাজের পার্থক্য সত্যেও একই মৌলিকত্ব আল্লাহর কুদরতের
অনুপম নিদর্শন।
“মানুষের দেখা
উচিত কি বস্তু হতে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে স্খলিত পানি থেকে।”
(সূরা ত্বারেক
৫,৬)
প্রাণীবিজ্ঞানের
একটি প্রমাণিত বিষয় হচ্ছে, মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম থাকে তার মধ্যে ২২ জোড়া
দেহকোষে এবং এক জোড়া জনন কোষে থাকে। এই এক জোড়াকে সেক্স ক্রোমোসোম বলে যা পুরুষের বেলায় XY এবং মহিলাদের বেলায় XX সন্তান পিতার কাছ থেকে X অথবা Y এবং মায়ের কাছ থেকে X ক্রোমোসোম নিয়ে জন্মগ্রহন
করে।
সন্তান
যদি পিতার কাছ থেকে X এবং মাতার কাছ থেকে X ক্রোমোসোম নিয়ে জন্ম গ্রহন করে তবে সে সন্তান মেয়ে
হবে। আবার যদি সন্তান পিতার কাছ থেকে Y এবং মাতার কাছ থেকে X ক্রোমোসোম নিয়ে জন্ম
গ্রহন করে তবে সে সন্তান ছেলে হবে।
“নিশ্চই
তিনি স্খলিত এক বিন্দু বীর্য হতে পুরষ ও নারী সৃষ্টি করছেন”।
(সূরা নজম
৪৫,৪৬)
“পবিত্র
তিনি যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে সৃষ্টি করেছেন জোড়ায়
জোড়ায়, যমীন যা উৎপন্ন করে, এমনকি তাদের নিজেদেরকে এং তারা যা জানেনা তাও”
(সূরা
ইয়াসিন-৩৬)
শুক্রানু
ও ডিম্বানু একক ভাবে কোন পরিবেশে জিবন্ত অস্তিত্ব জন্ম দিতে পারেনা। প্রত্যেকতটি
পুর্নাঙ্গ ও জীবন্ত মানবকোষে ৪৬টি ক্রোমোসোম থাকে। কিন্তু শুক্রানু
বা ডিম্বানুতে
২৩ টি, যা অসম্পুর্ন। যৌনমিলনের মাধ্যমে ২৩+২৩=৪৬ সম্পূর্ন করা হয়, অতঃপর তা
মাতৃগর্ভের একটি নিরাপদ আধারে স্থাপন করতঃ পুর্নাঙ্গ জিবন্ত মানবকোষ গঠন করা হয়। এ
নিয়ম সুনিয়ন্ত্রিত, ভুল ত্রুটিমুক্ত ও একটি পরিকল্পনার অধীন।
“আল্লাহ
জানেন প্রত্যেক নারী যা গর্ভধারন করে
এবং গর্ভাশয় যা সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হয় এবং আল্লাহর বিধানে প্রত্যেকটির জন্য
রয়েছে একতি নির্ধারিত পরিমাপ”
(সূরা রা’দ ৮)
“এটাই
আল্লাহর নিয়ম যা পুর্ব থেকে চাল আছে। তুমি আল্লাহর নিয়মে কোনো পরিবর্তন করতে
পারবেনা”
(সূরা ফাতহ ২৩)
কোনও পুরুষ
যখন স্ত্রীর কাছে গমন করে তখন ৪২ কোটি শুক্রানু স্ত্রীর জরায়ুতে প্রবেশ করে। কোনো
পুরুষের বীর্যে যদি শুক্রানুর সংখ্যা ২০
কোটির চাইতে কম হয় তাহলে তার থেকে কোনো সন্তান জন্ম নেয়না। (চলবে)
No comments:
Post a Comment